নারী ও পুরুষ উভয়কেই যেমন সৃষ্টিকুলের মধ্যে বিশেষ সম্মানিত করে সৃষ্টি করা হয়েছে, তেমনি ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষের মধ্যে কিছু বিশেষ গুণের বাস্তবতা কামনা করা হয়েছে। "নারী ও পুরুষের আদর্শ"
এই গুণগুলিই তাদেরকে আদর্শবান হিসাবে তৈরি করতে পারে এবং একমাত্র এই আদর্শের অধিকারী নারী-পুরুষই ইসলামের দেওয়া মর্যাদা রক্ষা করতে পারে। নারী-পুরুষের পারস্পরিক সম্পর্ক ও তাদের পারিবারিক জীবনের বিবরণ পেশ করার পূর্বে তাদের বিশেষ বিশেষ গুণ সংক্ষিপ্তভাবে পেশ করা হ'ল। আল্লাহ্ তা'আলা সূরা আহযাবের ৩৫-৩৬ নং আয়াতে আদর্শ নারী-পুরুষের জন্য ১২টি গুণ পেশ করেছেন। আমরা এইসব গুণাবলী সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে বইয়ের প্রাথমিক আলোচনা আরম্ভ করলাম। আশা করি, নর-নারী সকল পাঠক এসব গুণাবলী অর্জন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে ধন্য হবে। আল্লাহ তুমি কবুল কর-আমীন!
{إن المسلمين والمسلمات والمؤمنين والمؤمنات والقانتين والقانئات والصادقين والصادقات والصابرين والصابرات والخاشعين والخاشعات والمتصدقين والمتصدقات والصائمين والصائمات والحافظين فروجهم والحافظات والذاكرين الله كثيرا والذاكرات أعد الله لهم مغفرة وأجرا عظيما - وما كان لمؤمن ولا مؤمنة إذا قضى الله ورسوله أمرا أن يكون لهم الخيرة من أمرهم ومن يعص الله ورسوله فقد ضل ضلالا مبينا}
‘আল্লাহর অনুগত পুরুষ ও স্ত্রীলোক, ঈমানদার পুরুষ ও স্ত্রী লোক, আল্লাহর দিকে মনোযোগকারী পুরুষ ও স্ত্রী লোক, সত্য ন্যায়বাদী পুরুষ ও স্ত্রী লোক, সত্যের পথে দৃঢ়তা প্রদর্শনকারী পুরুষ ও স্ত্রীলোক, আল্লাহর নিকট বিনীত-নম্র পুরুষ ও স্ত্রীলোক, দানশীল পুরুষ ও স্ত্রীলোক, ছিয়াম পালনকারী পুরষ ও স্ত্রীলোক, লজ্জাস্থানের হেফাযতকারী । পুরুষ ও স্ত্রীলোক, আল্লাহ্কে অধিক মাত্রায় স্মরণকারী পুরুষ ও স্ত্রীলোক, আল্লাহ্ এদের জন্য স্বীয় ক্ষমা ও বিরাট পুরষ্কার প্রস্তুত করে রেখেছেন। কোন ঈমানদার পুরুষ ও স্ত্রীলোকের জন্য আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল যখন কোন বিষয়ে চূড়ান্তভাবে ফায়ছালা করেন, তখন সে ব্যাপারে তার বিপরীত কিছু করার কোন অধিকার নেই।আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করে সে সুস্পষ্ট ভ্রান্ত' (আল-আহযাব ৩৫-৩৬)।
অত্র আয়াতে নারী পুরুষের জন্য ১২টি শিক্ষণীয়, গ্রহণীয় ও আবশ্য পালনীয়
আদর্শ রয়েছে। যা ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করা হ'ল। প্রথম আদর্শ ঃ মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম স্ত্রীলোক। 'মুসলিম' শব্দের আভিধানিক অর্থ আত্মসমর্পনকারী। আর পারিভাষিক অর্থে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আইন পালনকারী।
عن عبد الله بن عمرو رضي الله عنهما عن النبي ، قال المسلم من
سلم المسلمون من لسانه ويده
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, রাসূল ৪ বলেছেন, 'পূর্ণ মুসলিম সে পুরুষ বা নারী যার যবান ও হাত হ’তে অন্যান্য পুরুষ বা নারী নিরাপদে থাকে' (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৬, বাংলা মিশকাত হা/৫)।
হাদীছের অর্থ হচ্ছে শরী'আতের হুকুম ব্যতীত যে কোন মানুষকে যে কোন রকমের কষ্ট দেওয়া ইসলাম বিরোধী কাজ। এতে মানুষ পূর্ণ মুসলিম থাকে না। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘মুসলিম সে ব্যক্তি যে, নিজের জন্য যেটা কল্যাণকর মনে করে অন্যের জন্যও সেটা কল্যাণকর মনে করে' (আহমাদ, মিশকাত হা/৫১৭১)। মানুষকে কষ্ট দেওয়া সদাচরণ বিরোধী কাজ, যার পরিণাম জাহান্নাম।
عن جبير بن مطعم أخبره أنه سمع النبي ، يقول لا يدخل الجنة قاطع
জুবায়ের ইবনু মুতঈম (রাঃ) বলেন, নবী বলেছেন, 'সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না' (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯২২, বাংলা মিশকাত হা/৪৭০৫)। কেননা সম্পর্ক ছিন্ন করাই হচ্ছে আদর্শ বিনষ্ট করার মূল। প্রকৃত মুসলমান না থাকার পরিচায়ক।
"নারী ও পুরুষের আদর্শ" দ্বিতীয় আদর্শ ঃ
"নারী ও পুরুষের আদর্শ" তৃতীয় আদর্শঃ
أمن هو قانت آناء الليل ساجدا وقائما يحذر الآخرة ويرجو رحمة
‘যে ব্যক্তি রাত্রিকালে সিজদার মাধ্যমে অথবা দাঁড়িয়ে ইবাদত করে, পরকালের
ভয় রাখে ও তার পালনকর্তার রহমতের প্রত্যাশা করে' (যুমার ৯)। আল্লাহ্ তা'আলা এখানে নারী-পুরুষের একটি বড় গুণ উল্লেখ করেছেন। আর তা হচ্ছে রাত জেগে ইবাদত করা, যা নবী-রাসূল ও বড় ইবাদতগুজার লোকদের আদর্শ।
আল্লাহ্ অন্যত্র বলেন,
وله من في السماوات والأرض كل له قانتون}
‘আকাশ ও যমীনে যা কিছু আছে সবাই তাঁর একনিষ্ঠভাবে ইবাদত করে' (রুম ২৬)। আল্লাহ তা'আলা অন্যত্র বলেন,
وقوموا لله قانتين
‘আর আল্লাহ্র সামনে একান্ত আদবের সাথে ইবাদতের জন্য দাঁড়িয়ে যাও’ (বাকারা ২৩৮)।
আদর্শ নারী-পুরুষের জন্য রাতের ইবাদত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চতুর্থ আদর্শঃ সত্য ও ন্যায়-নিষ্ঠ পুরুষ ও স্ত্রীলোক। সততা নারী-পুরুষের জন্য একটি প্রশংসনীয় আদর্শ। সততা এমন ঈমানের পরিচায়ক যার পরিণাম জান্নাত।
واصبر نفسك مع الذين يدعون ربهم بالغداة والعشي}
'আর আপনি নিজেকে ঐসবলোকের সাথে আঁকড়িয়ে ধরুন যারা তাদের প্রতিপালককে সকাল-সন্ধ্যায় ডাকে' (কাহাফ ২৮) আল্লাহ তা'আলা বলেন,
فاصبر على ما يقولون وسبح بحمد ربك قبل طلوع الشمس وقبل
'তারা যেসব দুঃখজনক ও কষ্টদায়ক কথা বলছে সেসব কথাকে অকাতরে সহ্য করুন এবং সূর্যোদয়ের পূর্বে ও অস্ত যাওয়ার পরে আপনার প্রতিপালকের প্রশংসা সহকারে তাসবীহ পাঠ করুন' (ত্ব-হা ১৩০)।
আয়াতগুলিতে বিপদের সময়ে ধৈর্য ধারণ করতে এবং সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহকে ডাকার জন্য বলা হয়েছে, যা মুমিন নারী-পুরুষের আদর্শ।