"নারী ও পুরুষের আদর্শ" চতুর্থ আদর্শঃ
সত্য ও ন্যায়-নিষ্ঠ পুরুষ ও স্ত্রীলোক। সততা নারী-পুরুষের জন্য একটি প্রশংসনীয় আদর্শ। সততা এমন ঈমানের পরিচায়ক যার পরিণাম জান্নাত। عن عبد الله بن مسعود قال قال رسول الله عليكم بالصدق فإن الصدق يهدي إلى البر وإن البر يهدي إلى الجنة وما يزال الرجل يصدق ويتحرى الصدق حتى يكتب عند الله صديقا وإن الفجور يهدي إلى النّار وما يزال الرجل يكذب ويتحرى الكذب حتى يكتب عند الله كذابا وفي
الذين يدعون ربهم بالغداة والعشي} مع واصبر نفسك 'আর আপনি নিজেকে ঐসবলোকের সাথে আঁকড়িয়ে ধরুন যারা তাদের প্রতিপালককে সকাল-সন্ধ্যায় ডাকে' (কাহাফ ২৮) আল্লাহ তা'আলা বলেন,
فاصبر على ما يقولون وسبح بحمد ربك قبل طلوع الشمس وقبل
‘তারা যেসব দুঃখজনক ও কষ্টদায়ক কথা বলছে সেসব কথাকে অকাতরে সহ্য করুন এবং সূর্যোদয়ের পূর্বে ও অস্ত যাওয়ার পরে আপনার প্রতিপালকের প্রশংসা সহকারে তাসবীহ পাঠ করুন' (ত্ব-হা ১৩০)।
আয়াতগুলিতে বিপদের সময়ে ধৈর্য ধারণ করতে এবং সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহকে ডাকার জন্য বলা হয়েছে, যা মুমিন নারী-পুরুষের আদর্শ।فجور وإن الفجور يهدي إلى النّار
আবদুল্লাহ্ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূল ৪ বলেছেন, 'তোমরা সত্যকে আঁকড়িয়ে ধর। কেননা সত্য মানুষকে নেকীর দিকে নিয়ে যায়। আর নেকী জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। যে ব্যক্তি সর্বদা সত্য কথা বলে এবং সত্য বলতে চেষ্টা করে, আল্লাহর কাছে তাকে সত্যবাদী বলে লিপিবদ্ধ করা হয়। আর তোমরা মিথ্যা থেকে বেঁচে থাক। কেননা মিথ্যা পাপের পথে নিয়ে যায় এবং পাপ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। যে ব্যক্তি সর্বদা মিথ্যা কথা বলে এবং মিথ্যা বলতে চেষ্টা করে, আল্লাহর নিকট তাকে মিথ্যাবাদী বলে লিপিবদ্ধ করা হয়' (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৮২৪)। "আদর্শ নারী ও পুরুষের জান্নাত"
অন্য বর্ণনায় আছে, ‘সত্যবাদিতা একটি নেকীর কাজ। আর নেকী জান্নাতের পথে
নিয়ে যায়। আর মিথ্যা হ'ল মহাপাপ। পাপ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়' (মুসলিম,
মিশকাত হা/৪৮২৪, বাংলা মিশকাত হা/৪৬১৩)।
"নারী ও পুরুষের আদর্শ" পঞ্চম আদর্শঃ
সত্যের পথে দৃঢ়তা প্রদর্শনকারী পুরুষ ও স্ত্রীলোক। 'ছবর'-এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে নিজেকে বেঁধে রাখা, ধৈর্য ধারণ করা। এখানে এমন পুরুষ ও নারীকে বোঝানো হয়েছে যারা আল্লাহর দ্বীন পালন ও তাঁর ইবাদত করতে গিয়ে সকল প্রকার দুঃখ কষ্ট অকাতরে সহ্যকরে অটল হয়ে থাকেন। শত বাঁধার মোকাবিলা করে দ্বীনের উপর অবিচল থাকে এবং কোনক্রমেই আদর্শচ্যুত হয় না। আল্লাহ্ তা'আলা বলেন,
سلام عليكم بما صبرتم فنعم عقبى الدار}
(ফেরেশতারা বলবে) তোমাদের ধৈর্যের কারণে তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। এবং তোমাদের এই পরিণাম গৃহ কতই না চমৎকার' (রা'দ ২৪)। আল্লাহ্ তা'আলা অন্যত্র বলেন,
وجزاهم بما صبروا جنة وحريرا } ‘আর তাদের ধৈর্যের কারণে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত ও রেশমী পোশাক' আল্লাহ্ তা'আলা অন্যত্র বলেন,
ষষ্ঠ আদর্শ ঃ আল্লাহ্র নিকট বিনীত-নম্র পুরুষ ও স্ত্রীলোক। আল্লাহ্ তা'আলা এখানে এমন নারী-পুরুষের আদর্শ বর্ণনা করেছেন, যারা অন্তর-মন ও অঙ্গ-প্রতঙ্গ সবকিছু দিয়ে বিনীতভাবে আল্লাহর ইবাদত করে। এখানে এমন এক শব্দ উল্লেখিত হয়েছে যার অর্থ- প্রশান্তি, স্থিতি, প্রীতি, শ্রদ্ধা, ভক্তি, বিনয়, ভয় মিশ্রিত ভালবাসা এবং আল্লাহর প্রতি আগ্রহ, উৎসাহ। আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, "আদর্শ নারী ও পুরুষের জান্নাত"
قد أفلح المؤمنون الذين هم في صلاتهم خاشعون}
'মুমিনগণ সফলকাম হয়েছে, যারা বিনয়-নম্রভাবে ভয়-ভীতি নিয়ে নিজেদের ছালাত আদায় করে' (মুমিন ১-২)। আল্লাহ্ তা'আলা অন্যত্র বলেন,
ويخرون للاذقان يبكون ويزيدهم خشوعا}
‘তারা ক্রন্দন করতে করতে নতমস্তকে ভূমিতে লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের বিনয়
নম্রভাব আরো বৃদ্ধি পায়’ (ইসরা ১০৯)। আয়াতের অর্থ হচ্ছে, ভয়-ভীতি নিয়ে ছালাত আদায় করা এবং পাপ করলে মাটিতে লুটিয়ে পড়া মুমিন নর-নারীর আদর্শ। "আদর্শ নারী ও পুরুষের জান্নাত"
"নারী ও পুরুষের আদর্শ" সপ্তম আদর্শ ঃ
দানশীল পুরুষ ও স্ত্রীলোক। আল্লাহ তা'আলা এখানে এমন নারী পুরুষের আদর্শ পেশ করেছেন, যারা গরীব-দুঃখী ও অভাবগ্রস্তদের প্রতি অন্তরে দয়া অনুভব করে, উদ্বৃত্ত মাল কেবল মাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে অভাবগ্রস্ত লোকদের প্রদান করে।
عن أبي عقبة بن عامر قال قال رسول الله إن الصدقة لتطفئ عن أهلها
حر القبور وإنما يستظل المؤمن يوم القيامة في ظل صدقته ওকবা ইবনু আমির (রাঃ) বলেন, রাসূল ৪ বলেছেন, 'নিশ্চয়ই ছাদাকা কবরের গরম শাস্তিকে ছাদাকাকারীর উপর থেকে নিভিয়ে দেয়। নিশ্চয়ই মুমিন কিয়ামতের দিন তার ছাদাকার ছায়াতলে থাকবে' (সিলসিলা ছহীহা হা/১৮১৬)। অসহায় মানুষকে নেকীর আশায় দান করা মুমিন নর-নারীর আদর্শ।
নারী ও পুরুষের আদর্শ [Ideal for women and men]
"নারী ও পুরুষের আদর্শ" অষ্টম আদর্শঃ
ছিয়াম পালনকারী পুরুষ ও স্ত্রীলোক। আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী
যেসব নারী-পুরুষ ছিয়াম পালন করবে তাদের তাকওয়া বৃদ্ধি হবে এবং ধৈর্য বেশি
হবে। ছিয়াম জান্নাত লাভের বড় মাধ্যম, যার প্রতিদান আল্লাহ্ তা'আলা নিজ হাতে
দিবেন।
عن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه قال سمعت النبي ، يقول من صام
يوما في سبيل الله بعد الله وجهه عن النار سبعين خريفا
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল ৪ বলেছেন, 'যে ব্যক্তি আল্লাহর ওয়াস্তে একটি ছিয়াম পালন করবে আল্লাহ্ তার মুখমণ্ডলকে জাহান্নামের আগুন থেকে সত্তর বছরের পথ দূরে করে দিবেন' (বুখারী হা/২৮৪০, মুসলিম, মিশকাত হা/২০৫৩, বাংলা মিশকাত হা/১৯৫০)।
عن سهل بن سعد رضي الله عنه عن النبي ، قال في الجنة ثمانية أبواب فيها باب يسمى الريان لا يدخله إلا الصائمون
সাহল ইবনু সা'দ (রাঃ) বলেন, রাসূল বলেছেন, 'জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে তন্মধ্যে একটি দরজার নাম হচ্ছে রাইয়্যান। ছিয়াম পালনকারী ব্যতীত ঐ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না' (বুখারী হা/৩২৫৭, মুসলিম, মিশকাত হা/১৯৫৭, বাংলা মিশকাত হা/১৮৬১)।
দশম আদর্শঃ আল্লাহকে অধিক মাত্রায় স্মরণকারী পুরুষ ও স্ত্রীলোক। এখানে আল্লাহ তা'আলা এমন আদর্শবান নারী-পুরুষের কথা বলেছেন, যারা আল্লাহকে কস্মিনকালেও এবং মুহূর্তের তরেও ভুলে যায় না। আর মুখ ও অন্তর উভয় ক্ষেত্রেই সর্বদা আল্লাহকে স্মরণ করে। আল্লাহ্ তা'আলা বলেন,
{واذكر ربك كثيرا وسبح بالعشي والإبكار} ‘আর আপনি আপনার প্রতি পালককে বেশি বেশি স্মরণ করুন এবং সকাল সন্ধ্যায় তাসবীহ পাঠ করুন' (আলে ইমরান ৪১)।
আল্লাহ্ তা'আলা অন্যত্র বলেন,
{يا أيها الذين آمنوا اذكروا الله ذكرا كثيرا}
'হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর” (আহযাব ৪১)।
عن عائشة قالت كان النبي ع يذكر الله على كل أحيانه আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী সবসময় আল্লাহকে স্মরণ করতেন (সিলসিলা ছহীহা হা/৪০৬)। অত্র হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় যে, মানুষের কর্তব্য হচ্ছে সবসময় আল্লাহকে স্মরণ
করা। আল্লাহকে স্মরণ করা আদর্শ নারী-পুরুষের পরিচয়।
عن أبي هريرة وأبي سعيد الخدري أنهما شهدا على النبي ع أنه قال لا يقعد قوم يذكرون الله عز وجل إلا حقتهم الملائكة وغشيتهم الرحمة
ونزلت عليهم السكينة وذكرهم الله فيمن عنده
আবু হুরায়রা ও আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল ৪ বলেছেন, 'যখন কোন মানুষ আল্লাহ্র যিকির করতে বসে তখন আল্লাহ্র ফেরেশতাগণ তাদেরকে ঘিরে নেন, তাঁর রহমত তাদেরকে ঢেকে ফেলে এবং তাদের উপর শান্তি বর্ষিত হয়। আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর পাশের ফেরেশতাগণের সামনে তাদের প্রশংসামূলক আলোচনা করেন? (মুসলিম হা/৪৮৬৮, মিশকাত হা/২২৬১, বাংলা মিশকাত হা/২১৫৪)। "আদর্শ নারী ও পুরুষের জান্নাত"