আইফেল টাওয়ারের ইতিহাস - Eiffel Tower True History

আইফেল টাওয়ারের ইতিহাস - Eiffel Tower-আইফেল টাওয়ার পরিদর্শন-আইফেল টাওয়ার ধ্বংস-আইফেল টাওয়ার এর কাজ কি-আইফেল টাওয়ারের কাহিনী-আইফেল টাওয়ার এর উচ্চতা

প্যারিসের কথা শুনলেই সবার আগে মাথায় আসে আইফেল টাওয়ার এর নাম।১৮৮৯ সালে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল আকাশছোঁয়া এই নান্দনিক স্থাপত্য। শুধু তাই নয় দীর্ঘ ৪০ বছর এটি পৃথিবীর উচ্চতম স্থাপনার আসন দখল করে রেখেছিল। আর এরই ধারাবাহিকতায় লৌহনির্মিত এই স্থাপত্য হয়ে উঠেছে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস, তথা সমগ্র দেশের প্রতীক।


আইফেল টাওয়ারের ইতিহাস - Eiffel Tower

ফরাসি শতবর্ষ উদযাপনের জন্য ১৮৮৭ সালে একটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। সেই ঘটনাটিকে স্মরণীয় এক নিদর্শনে ধরে রাখার জন্যই এই প্রতীকি মিনারটি তৈরির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। আর এ কাজের জন্য বেছে নেওয়া হয় বিখ্যাত সেতু প্রকৌশলী আলেকজান্ডার গুস্তাভ আইফেলকে। তিনি পেটা লোহার খোলা জাফরি দিয়ে ৩০০ মিটার  উঁচু এই নিখুঁত ও চমৎকার মিনারটি নির্মাণ করেন। তার নামানুসারেই মিনারটির নাম রাখা হয়েছিলো ‘আইফেল টাওয়ার’।১৮৮৯ সালে নির্মাণ সম্পন্ন হবার পর থেকে টানা ৪০ বছর আইফেল টাওয়ার ছিলো পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় মানব নির্মিত স্থাপনা। 
কথিত আছে, আইফেল টাওয়ার নির্মাণে ১৮,০৩৮ টি ধাতব খন্ডকে একত্রে সংযুক্ত করণের জন্য ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ২ কোটি ৫০ লক্ষ নাট ব্যবহৃত হয়েছিল। আর এই কাজে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল ৩০০ জন দক্ষ কর্মীকে। বিশাল আকৃতির এই টাওয়ারটি সম্পূর্ণ নির্মাণ করতে মোট সময় লেগেছিল ২ বছর ২ মাস ৫ দিন।প্রতি ৭ বছর পর পর এই টাওয়ারটিকে একবার করে রং করা হয়। সম্পূর্ণ এই টাওয়ারটি রং করতে প্রতিবার ৬০ টন রঙের প্রয়োজন হয়।তার মানে আইফেল টাওয়ারের শুধু রং এর ওজনই  ১০টি প্রাপ্তবয়স্ক হাতির ওজনের সমান।  

আইফেল টাওয়ার নির্মিত হবার পর স্থাপনাটি বিশ্বজুড়ে এক ধরনের উন্মাদনা তৈরি করে।
ফ্রান্স ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ৯ টিরও বেশি প্রতিকৃতি নির্মাণ করা হয়েছে এই টাওয়ারটির। তবে এই প্রতিকৃতি গুলোর মধ্যে নেভাদা , মেক্সিকো ও শেনঝেনে স্থাপিত প্রতিকৃতি গুলো সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য। তবে আসল আইফেল টাওয়ারের সাথে এগুলোর কোনোটিরই তুলনা চলে না। 

১৯০৯ সালে আইফেল টাওয়ারের  চূড়ায় বসানো হয় একটি বেতার অ্যান্টেনা। এতে এর উচ্চতা আরও  ৬৬ ফুট বেড়ে যায়। সেই থেকে আইফেল টাওয়ারকে বেতার তরঙ্গ প্রেরণের জন্যও ব্যবহার করা হচ্ছে। এই বিস্ময়কর স্থাপত্যের মধ্যে ১২০টি আ্যন্টেনা রয়েছে। টাওয়ারটির একেবারে শীর্ষে ওঠার জন্য প্রায় ১,৬৬৫টি ধাপ রয়েছে।

এই টাওয়ারটিকে কখনো কখনো প্রকৃত উচ্চতার চেয়েও আরো বেশি লম্বা দেখায়। এই ঘটনাটি ঘটে মূলত লোহার দৈর্ঘ্য সম্প্রসারণের ফলে।গ্রীষ্মকালে সূর্যের প্রচণ্ড তাপে টাওয়ারটির ধাতব কাঠামো সমূহের ধাতব সম্প্রসারণ ঘটে। অর্থাৎ টাওয়ারটিতে ব্যবহৃত লোহার দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পায়। আর এই কারণেই টাওয়ারটিকে কখনো কখনো প্রকৃত উচ্চতার চেয়েও কিছুটা বেশি উঁচু মনে হয়। এছাড়াও টাওয়ারটি মাঝে মাঝে সূর্যের তাপে লৌহ সম্প্রসারণের কারণে কিছুটা হেলে পড়ে। ফলে আইফেল টাওয়ার কখনো কখনো আবার বিদীর্ণ রূপও ধারণ করে। প্রতি রাতে এই টাওয়ারটিকে আপাদমস্তক আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। পুরো আইফেল টাওয়ার কে আলোকোজ্জ্বল করে তুলতে প্রায় ২০ হাজার বাতি জালানো হয়। সূর্যাস্তের পর প্রতি ঘন্টায় ৫ মিনিট করে ২০,০০০ বাল্বের আলোক ছটায় টাওয়ারটি  এক অপরুপ সৌন্দর্য ধারন করে।
 

১৯৪৬ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানি ফ্রান্স দখল করে নিলে, প্যারিসের স্থানীয় বাসিন্দারা আইফেল টাওয়ারের লিফটের তার কেটে দেয়। ফলে হিটলার যখন আইফেল টাওয়ার পরিদর্শনে আসে, তখন পায়ে হেঁটে এই টাওয়ারে উঠতে বাধ্য হয়। এর জন্যই  বলা হয়ে থাকে, হিটলার প্যারিস জয় করতে পারলেও আইফেল টাওয়ার জয় করতে পারেনি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে জার্মানি যখন পরাজয়ের মুখে, তখন হিটলার প্যারিসের আইফেল টাওয়ার ধ্বংসের নির্দেশ দেয়। ।তবে হিটলারের এক সেনা নায়ক তার কথা অমান্য করে। এর ফলস্বরূপ পৃথিবীর বুকে আজো আইফেল টাওয়ার অক্ষত অবস্থায় রয়েছে।

টাওয়ারের চূড়া থেকে পুরো শহরের সৌন্দর্য দেখা যায় বলে এটি অনেক পর্যটককে আকর্ষন করে। এই টাওয়ারটি দেখতে প্রতিবছর প্রায় ৭০ লক্ষ পর্যটক ভিড় করে। এখনো পর্যন্ত প্রায় ২৫ কোটি লোক শুধু আইফেল টাওয়ার দেখতেই ফ্রান্সে ভ্রমণ করেছে।বিশেষ দিনগুলোতে আইফেল টাওয়ারকে বিশেষ রঙে  সাজানো হয়। ফলে আইফেল টাওয়ারের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পায়।  দেশী বিদেশী পর্যটকদের ভীড় থাকে চোখে পড়ার মতো।

Getting Info...

Post a Comment

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.